চুল পড়া সমস্যা এ সময়ে কম-বেশি প্রায় সবাইকে পোহাতে হচ্ছে। বর্ষার এ সময়ে আর্দ্রতা বেশি থাকে, ফলে চুল পড়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। যতবারই চুল ব্রাশ করা হয় ততবারই মনটা খারাপ হয়ে যায় ব্রাশে অথবা চিরুনিতে জড়িয়ে থাকা চুল দেখে।
কী করে চুল পড়া রোধ করা যায় এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন হাবর্স আয়ুর্বেদিক ক্লিনিকের স্বত্বাধিকারী শাহিনা আফরিন মৌসুমী।
চুল নারীর সৌন্দর্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নারীর সৌন্দর্য প্রকাশ পায় তার চুলে। কিন্তু অতিরিক্ত চুল পড়তে থাকলে চুল হালকা ও পাতলা হয়ে যায়। তাই প্রথম থেকে চুলের যত্নের প্রয়োজন। এ সময়ে প্রতিদিন শ্যাম্পু করা জরুরি। কারণ অতিরিক্ত গরমে মাথা ঘেমে গিয়ে চুলের গোড়া নরম হয়ে যায়। ঘামের কারণে শরীর থেকে লবণ বের হয়ে যায়। ফলে ক্ষারের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে চুল দুর্বল হয়ে ঝরে যায়। তাই শ্যাম্পু করার সময় লেবুর রস অথবা অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে শ্যাম্পু করতে হবে। এছাড়া সপ্তাহে একদিন সময় নিয়ে অবশ্যই বিশেষ যত্ন নিতে হবে।
এক কাপ আমলকী পাউডার, হাফ কাপ মেথি পাউডার, হাফ কাপ শিকাকাই পাউডার এবং সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে ফুটাতে হবে। এরপর কুসুমগরম অবস্থায় স্ক্যাল্পে আধা ঘণ্টা রেখে ভালো করে শ্যাম্পু করে নিতে হবে। এতে চুল পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।
এছাড়াও আরেকটি বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আর সেটা হল তেল ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন হওয়া। চুল বেশি তৈলাক্ত হলেও চুল পড়ে। তাই একটা পেঁয়াজ, একটা খোসাসহ লেবু ও মসুরের ডালের গুঁড়া ভালো করে ব্লেন্ড করে নিয়ে পুরো স্ক্যাল্পে আধা ঘণ্টা রেখে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এটি শ্যাম্পুর মতো কাজ করবে। এছাড়া চুলে নমনীয়তা বজায় থাকবে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। বৃষ্টির পানিতে চুল ভিজে গেলে অবশ্যই তা শুকিয়ে ফেলতে হবে। হেয়ার ড্রায়ার, আয়রন এ সময়ে কম ব্যবহার করা ভালো। ফ্যানের বাতাসে চুল শুকানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন। বাইরে যাওয়ার আগে টেলকম পাউডার স্ক্যাল্পে হালকাভাবে ব্যবহার করলে ভালো। কিন্তু যদি পাউডার ব্যবহার করা হয় তাহলে অবশ্যই বাসায় এসে পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। কারণ এতে চুলের ফলিকলগুলোর মুখ বন্ধ হয়ে যাবে। এতে করে রক্ত সঞ্চালনে বাধা পাবে। আমাদের প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। অনেকেই আমরা বাইরে গেলে পানি কম খেয়ে থাকি। এছাড়া ভিটামিন ‘সি’ এ সময়ে প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে। নিয়মিত দুধ খেতে হবে। কমবেশি আমরা দুধ খেয়ে থাকি। কিন্তু চুলের সমস্যায় যদি আমরা দুধের সঙ্গে একটি খেজুর (বিচি ছাড়া) ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে খেলে ক্যালসিয়াম বৃদ্ধি পাবে। ক্যালসিয়ামের অভাবেও চুল পড়ে। বাজারে এখন মৌসুমি ফলের সমারোহ। তাই এসব মৌসুমি ফল খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। চিরুণি অথবা ব্রাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। একজনের চিরুরি অন্যজন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। নিয়মিত চুলের যত্ন নিলে চুল পড়া কমে যাবে। এ জন্য নিজেকেই সচেতন থাকতে হবে। আর পরিবারের ছোট সদস্যটির দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। চুলের যতেœর ক্ষেত্রে ছোট সদস্যটির বিশেষ খেয়াল রাখা দরকার। কারণ ছোটরা চুলের ব্যাপারে খুবই সেনসেটিভ। অনেকেই চুল নিয়মিত আঁচড়াতে চায় না। কাউকে আঁচড়াতে দিতেও চায় না। ঠিকমতো চুল শুকাতে পারে না। তাই ছোটদের চুলের যত্নের ব্যাপারে বড়দের যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন।